২৪ নভেম্বর ২০২৫ - ১৫:০৪
গাজায় ৪৪ দিনে প্রায় ৫০০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে দখলদার বাহিনী

গাজায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ৪৪ দিনে ইসরায়েল কমপক্ষে ৪৯৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে/শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): হামলায় প্রায় ৩৪২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই শিশু, নারী এবং বয়স্ক ব্যক্তি।


বিবৃতিতে মিডিয়া অফিস বলেছে, 'ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃপক্ষের যুদ্ধবিরতি চুক্তির ক্রমাগত গুরুতর এবং পদ্ধতিগত লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানাই। এই লঙ্ঘনগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং চুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত মানবিক প্রোটোকলের স্পষ্ট লঙ্ঘন।'

এতে বলা হয়, দখলদার বাহিনীর 'লঙ্ঘনের মধ্যে শনিবারই ২৭টি ঘটেছে - যার ফলে গতকাল ২৪ জন শহীদ এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। মানবিক ও নিরাপত্তাগত পরিণতির জন্য ইসরায়েক সম্পূর্ণরূপে দায়ী।'

আল জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বাধ্যতামূলকভাবে বিধ্বস্ত অঞ্চলে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সাহায্য এবং চিকিৎসা সরবরাহের সম্পূর্ণ ও অবাধ প্রবাহের কথা থাকলেও, ইসরায়েল এটি কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করে চলেছে। ইসরায়েলি বাহিনী শনিবার গাজাজুড়ে বিমান হামলা চালিয়েছে - যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে ছয় সপ্তাহ ধরে চলমান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের সর্বশেষ ঘটনায় শিশুসহ কমপক্ষে ২৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় দাবি করেছে, গাজার তথাকথিত 'হলুদ রেখার' অভ্যন্তরে হামাসের এক যোদ্ধা ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করার পর তারা এই সর্বশেষ হামলা চালায়। ইসরায়েল পাঁচজন সিনিয়র হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।

'নামে যুদ্ধবিরতি'

হামাস ইসরায়েলের কাছে আহ্বান করেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর আক্রমণকারী যোদ্ধার পরিচয় প্রকাশ করুক।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য ইজ্জত আল-রিশেক গাজা চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের এবং মার্কিন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন ইসরায়েলকে গাজা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য চাপ দেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'ইসরায়েল চুক্তি এড়িয়ে যাওয়ার এবং ধ্বংসের যুদ্ধে ফিরে যাওয়ার জন্য অজুহাত তৈরি করছে। ইসরায়েলই প্রতিদিন এবং পদ্ধতিগতভাবে চুক্তি লঙ্ঘন করে।' হামাস যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে - এমন দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।

গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আযম আজ রোববার বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কেবল 'নামমাত্র যুদ্ধবিরতি। বাস্তবে, ঘোষিত বিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েলি বাহিনী গাজাজুড়ে ধারাবাহিক বিমান হামলা চালিয়েছে।'

আবু আযুম বলেন, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও এই ধরনের হামলার ফলে গাজার ফিলিস্তিনিরা 'নিরাপত্তার এক ভগ্নাংশ অনুভূতি' অনুভব করছে। 'এই ধরনের হামলা এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে যে, গাজা চুক্তিকে একটি প্রকৃত বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে একটি কৌশলগত (সেনা) প্রত্যাহার হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।'

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার আরও গভীরে তাদের বাহিনী পুনঃস্থাপন করায় উত্তর গাজায় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে চুক্তিতে উল্লেখিত 'হলুদ রেখা'টি একটি অচিহ্নিত সীমানাকে বোঝায়। গত মাসে চুক্তি কার্যকর হওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে নিজেদের সরিয়ে নেয়।

কিন্তু দখলদার বাহিনী সীমান্তরেখার দিকে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর নিয়মিতভাবে গুলি চালিয়েছে এবং হত্যা করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি এখনো তারা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

শনিবার হামাস ইসরায়েলকে বানোয়াট অজুহাতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে এবং মধ্যস্থতাকারী - যুক্তরাষ্ট্র, মিশর এবং কাতারকে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে।

হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় অবস্থিত হলুদ রেখার বাইরেও পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেছে। চুক্তির অংশে থাকা নির্ধারিত সীমানা তারা পরিবর্তন করে ফেলেছে।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha